Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পুষ্টি নিরাপত্তা ও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জিংক সার

ড. নির্মল চন্দ্র শীল১ ড. মোঃ আশরাফ হোসেন২

জিংক বা দস্তা এমন একটি অণুপুষ্টি যা উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহের জৈবিক ও বিপাকীয় কার্যাবলীর জন্য একান্ত অত্যাবশ্যক। পরিমাণে কম লাগে এ বিবেচনায় জিংককে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বললেও এর কার্যাবলী অনেক গুরুত্বপূর্ণ যা জীবসত্তার বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। আমাদের দেশের কৃষিতে জিংকের প্রয়োজনীয়তার কথা আশির দশক থেকে কৃষি বিজ্ঞানীগণ উপলব্ধি করে আসছেন। ধানভিত্তিক শস্য চাষে জিংক ব্যবহারের বিষয়টি উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। জিংক ঘাটতিতে যেমন উদ্ভিদের বৃদ্ধি, বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়ে ফলন কমে যায় তেমনি মানবদেহে জিংক  অপুষ্টির কারণে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ হয়। বিশেষ করে জিংকের অভাবজনিত কারণে ক্ষুধামন্দা, শিশুদের বৃদ্ধি কমে যাওয়া, চুল ও নখের অস্বাভাবিকতা, হাড় গঠনে অসামাঞ্জস্যতা, ক্ষতস্থান স্বাভাবিক হতে বিলম্ব হওয়া, বন্ধ্যত্ব, ডায়েরিয়া, রক্তশূন্যতা, স্নায়বিক দুর্বলতা, রাতকানা, মানসিক অস্থিরতা ও ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের অসুস্থতা দেখা দেয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ জিংক ঘাটতিজনিত অপুষ্টিতে ভুগছে। ইউনিসেফ এর তথ্য মতে জিংক ঘাটতিজনিত কারণে সারা বিশ্বে চার লক্ষেরও অধিক শিশু মারা যায়। সারা পৃথিবীর অন্ততঃ ৫০ শতাংশ কৃষি জমিতে জিংক ঘাটতি বিদ্যমান, ফলে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে মানুষের দেহে জিংকের অপুষ্টি বেড়ে চলেছে। উন্নয়নশীল দেশের মানুষ যেহেতু দানাজাতীয় শস্য বেশি খায় তাই তাদের শরীরে জিংকের ঘাটতি খুবই প্রকট।
উদ্ভিদদেহে জিংকের ভূমিকা
উদ্ভিদদেহে জিংক বৃদ্ধি সহায়ক হরমোন অক্সিন গঠনে সাহায্য করে। আমিষ সংশ্লেষণ করে, ক্লোরোফিল তৈরিতে অংশগ্রহণ করে। কোষ ঝিল্লি (
Membrane)) কে  দৃঢ়তা বা অখÐতা দান করে। উৎসেচক এর কার্যাবলী গতিশীল করে। পরাগরেণু গঠন নিয়ন্ত্রণ করে।
জিংকের ঘাটতিজনিত লক্ষণ
উদ্ভিদদেহে জিংকের অভাব হলে কচিপাতা মধ্যশিরার  গোড়ার দিক থেকে বিবর্ণতা (
Chlorosis) দেখা দেয় ও সবুজ রং হারিয়ে সাদাটে হতে থাকে।  বৃদ্ধি কমে যায় এবং গাছ খর্বাকৃতি হয়। ফসল পরিপক্ব হতে বেশি সময় লাগে। পত্রের আকৃতি ছোট হতে থাকে ক্রমান্বয়ে ছোট আকারের গুচ্ছ পাতা তৈরি হয় যা রোসেটিংনামে পরিচিত। নিচের পাতায় বাদামি দাগ পড়ে। পরবর্তীতে পাতা খয়েরি আকার ধারণ করে এবং ক্রমান্বয়ে পুড়ে যাওয়া বর্ণ ধারণ করে।  লেবুজাতীয় উদ্ভিদের মধ্য শিরা সবুজ থাকে কিন্তু শিরার মধ্যবর্তী অংশ সাদাটে হয়ে যায়।  লিগিউম জাতীয় উদ্ভিদের বিশেষত মুগডালের পাতা প্রাথমিক অবস্থায় হলুদাভ হয়ে যায়। পরবর্তীতে শিরার মধ্যবর্তী অংশে পচন (নেক্রোসিস) দেখা দেয় কিন্তু  শিরা তখনও সবুজ থাকে।
মৃত্তিকা ও উদ্ভিদে জিংক ঘাটতির কারণ
মৃত্তিকা ও উদ্ভিদে জিংক ঘাটতির কারণ হচ্ছে : ১। অধিক ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম বাই কার্বনেট সমৃদ্ধ ক্ষারীয় (
pH>7.5) চুনযুক্ত মাটিতে জিংকের প্রাপ্যতা কম। ২।মাটিতে অধিক মাত্রায় ফসফরাস থাকলে জিংক ফসফেট হিসাবে অদ্রবীভূত রাসায়নিক যৌগ তৈরি হয়ে যায় ফলে উদ্ভিদ কর্তৃক জিংক পরিশোষণ ব্যাহত হয়। তাছাড়া, মৃত্তিকার  দ্রবণে অধিক মাত্রায় কপার, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজ আয়ন থাকলে উদ্ভিদ কর্তৃক জিংক পরিশোষণ বাঁধাগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশের মাটিতে জিংক ঘাটতি
উচ্চফলনশীল ধান চাষ আবাদের ফলে বাংলাদেশের বেশির ভাগ জমি যেহেতেু বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন থাকে তাই এদেশের মাটিতে জিংকের ঘাটতি ক্রমান্বয়ে প্রকট আকার ধারণ করছে। মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট এর তথ্য মতে, বাংলাদেশের ২.৭৬    মিলিয়ন হেক্টর জমিতে জিংকের ঘাটতি বিদ্যমান যা মোট আবাদি জমির এক তৃতীয়াংশেরও অধিক। কৃষির নিবিড়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ ঘাটতি উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। তাছাড়া চুনযুক্ত মাটি, বেলে মাটি, অতি বেশি জৈব পদার্থপূর্ণ পিটমাটি, উচ্চমাত্রার পিএইচ    সমৃদ্ধ লবণাক্ত মাটি, পাহাড়ের পাদদেশের পিডমন্ট মাটিতে জিংকের সহজাত ঘাটতি বিদ্যমান।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল (অঊত) ভিত্তিক জিংকের ঘাটতিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে সক্রিয় গঙ্গা প্লাবনভূমি (অঞ্চল-১০) উঁচু গঙ্গা বিধৌত প্লাবনভুমি (১১)। নিম্ন গঙ্গা বিধৌত প্লাবনভুমি (১২), গোপালগঞ্জ-খুলনা বিল (১৪), সেন্টমার্টিন কোরাল দ্বীপ (২৪), আখাউড়া সোপান (৩০), পুরাতন হিমালয়ের পাদভূমি (১), সক্রিয় তিস্তা প্লাবনভুমি (২), তিস্তা সর্পিল (গবধহফবৎ) প্লাবনভূমিতে (৩) জিংকের ঘাটতি খুবই প্রকট। বৃহত্তর সিলেট এলাকার বিস্তীর্ণ তিনটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল (২০,২১,২২) ব্যতীত দেশের বাদবাকি অঞ্চলে জিংকের কমবেশি ঘাটতি বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, বরিশাল ও কুমিল্লা জেলার অধিকাংশ এলাকায় জিংকের তীব্র ঘাটতি রয়েছে ।
জিংক সংবেদনশীল ফসল
এদেশের মাটিতে জিংকের ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় সব ধরনের ফসলেই জিংক সার ব্যবহারের ফলে তাৎপর্যপূর্ণ সাড়া তাদের ফলন বৃদ্ধি ও বিকাশের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়েছে।  ভুট্টা, ধান, গম, আলু পিয়াজ, মরিচ, টমেটো, পালংশাক, মটরশুঁটি, মুগডাল, সয়াবিন, সূর্যমুখী, সরিষা জাতীয় ফসল জিংক ঘাটতিরপ্রতি অতি সংবেদনশীল। তাছাড়া লেবুজাতীয় উদ্ভিদও জিংকের প্রতি ষ্পর্শ কাতর।
জিংক সার ব্যবহারের সুফল
বাংলাদেশের জিংক ঘাটতিপূর্ণ অঞ্চলে বিভিন্ন ফসলে জিংক সার ব্যবহারের ফলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। জিংক ব্যবহারের ফলে হলুদের ফলন ৪৪%,  ভুট্টার ফলন ৪৩%, মরিচ এর ফলন ৩৮%, আদার ফলন ২৮% বৃদ্ধি পেয়েছে ।  তাছাড়া জিংক সার ব্যবহারের ফলে রোপা আমন ধানের ২৪% অধিক ফলন রেকর্ড করা হয়েছে। আবার জিংক সার পাতায় স্প্রে করে গমের দানায় জিংকের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। তদ্রƒপ ধানের দানায় জিংক এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার গবেষণালব্ধ ফলাফল পাওয়া গেছে। সম্প্রতি হেক্টরপ্রতি ৩ কেজি জিংক সার ব্যবহার করে গমের ও ধানের দানায় যথাক্রমে ৫২ পিপিএম ও ২৫ পিপিএম জিংকসমৃদ্ধ হয়েছে। এক্ষেত্রে জিংক ব্যবহারে ফলে দানায় ১০-২০% জিংক বৃদ্ধি পেয়েছে।
জিংক সার ব্যবহারের সুপারিশ
মৃত্তিকার উর্বরতা উন্নয়নে জিংক সার ব্যবহারের নিয়মাবলি যেমন : ০১) মৃত্তিকার উর্বরতার মাত্রা, ফসলের ধরন, ঋতুভেদে এদেশের মাটিতে সাধারণত ২-৫ কেজি/হেক্টর জিংক সার সুপারিশ করা হয়। ০২) কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-১০, ১১, ১২ ও ক্ষেত্র বিশেষে ১৩ যেখানে মাটি চুন যুক্ত ঐ সব এলাকায় রবিও খরিপ উভয় মৌসুমের ফসলের জন্য জিংক সার প্রয়োগ করতে হবে। ০৩) যে সমস্ত এলাকার মাটিতে বছরে ২-৩ টি ধান চাষ করা হয় সেখানে প্রথমে জন্মানো ধান যেমন- বোরো আবাদের জন্য  সুপারিশের পূর্ণমাত্রার পরিমাণ জিংক সার প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তী ২য় ও তৃতীয় ধান ফসলে প্রত্যেকটির জন্য সুপারিশের অর্ধেক পরিমাণ জিংক সার প্রয়োগ বিধেয়। ০৪) ধানভিত্তিক শস্যবিন্যাসে শুধুমাত্র ধান ফসলে জিংক সার প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তী রবিশস্যে জিংক সার প্রয়োগ না করলেও চলবে। তবে শস্যবিন্যাসে ভুট্টা, আলু, সবজি ও মসলা জাতীয় (মরিচ, পেঁয়াজ) ফসল থাকলে ধান ফসলে পূর্ণ মাত্রায় জিংকসার ব্যবহার করার পরেও পরবর্তী ওই সমস্ত ফসলে সুপারিশ মোতাবেক পূর্ণমাত্রায় জিংক সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। ০৫) সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জিংকসার কিছু ঝুর ঝুরে মাটির সাথে মিশিয়ে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যায়। কর্দম প্রধান মাটিতে ব্যান্ড পদ্ধতিতেও  প্রয়োগ করা যেতে পারে। ০৬) পাতা ও সবজিজাতীয় ফসল, ফলদ বৃক্ষে জিংকসার পাতায় প্রয়োগ (ঋড়ষরধৎ ংঢ়ৎধু) করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে  প্রতিলিটার পানিতে ৩-৪ গ্রাম জিংক সালফেট হেপ্টাহাইড্রেট দ্রবীভূত করে পাতায় সিঞ্চণ করা যেতে পারে। ধান ও ভুট্টা ফসলে যদি জিংক-এর তীব্র ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় তবে উক্ত মাত্রার জিংক সার ১৫  দিন অন্তর ২ বার সিঞ্চণ করা যেতে পরে। এ ক্ষেত্রে,  হেক্টর প্রতি ১০০-১৫০ লিটার স্প্রে  দ্রবণ প্রয়োজন হতে পারে। ০৭) ফসলের বীজ ০.১ % জিংক সালফেট হেপ্টাহাইড্রেট দ্রবণে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে নিয়ে প্রাইমিং করে বপন করলে উত্তম ফল পাওয়া যেতে পারে।
জিংকসার প্রয়োগের সাবধানতা
মৃত্তিকা নমুনা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সুপারিশকৃত মাত্রা অনুযায়ী জিংক সার প্রয়োগ করতে হবে। জিংক সার ফসফেট (টিএসপি, এসএসপি ও ডিএপি) ও কম্পোস্ট সারের সাথে মিশ্রিত করা যাবে না। তাই জমিতে শেষ চাষের বেশ পূর্বে কম্পোস্ট ও ফসফেট সার এবং শেষ চাষের সময় জিংক সার প্রয়োগ করা বিধেয়। প্রখর সূর্যালোকের মধ্যে পাতায় স্প্রে না করে পড়ন্ত  বিকেলে সূর্যাস্তের পূর্বে স্প্রে করা উত্তম। জিংকসার জিংক সালফেট মনোহাইড্রেট (৩৬% জিংক ) ও জিংক সালফেট হেপ্টাহাইড্রেট (২৩% জিংক) সরকার কর্তৃক  সুপারিশকৃত। অনুমোদিত  ডিলারের কাছ থেকে জিংক সালফেট সার ক্রয় করতে হবে । কোন অবস্থাতেই ভেজাল সার ব্যবহার করা যাবে না। এক্ষেত্রে সন্দেহ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।
খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মৃত্তিকার উর্বরতা উন্নয়নে এদেশের মাটিতে জিংকসার প্রয়োগ অনস্বীকার্য। সুপারিশকৃত মাত্রা ও প্রথা অনুযায়ী জিংকসার ব্যবহারের কার্যক্রম জোরদারকরণের মাধ্যমে এদেশের কৃষি যুগোপযোগীকরণ এখন সময়ের দাবি।


১মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন উইং, মোবাইল ঃ ০১৭১৮২০১৪৯৯, ই-মেইল ঃ nirmal_shil@yahoo.com, ২মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, খামার বিভাগ, বিএআরআই, জয়দেবপুর, গাজীপুর

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon